বাংলাদেশে তালাক, বা বিবাহ বিচ্ছেদ, একটি সংবিধানিক প্রক্রিয়া যা সঠিকভাবে অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তালাকের বিভিন্ন পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচিত হবে।
Table of Contents
Toggleতালাক/ডিভোর্স/ বিবাহ বিচ্ছেদ
বাংলাদেশে তালাক, বা বিবাহ বিচ্ছেদ, একটি সংবিধানিক প্রক্রিয়া যা সঠিকভাবে অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তালাকের বিভিন্ন ধরন ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা থাকা আবশ্যক, যাতে কেউ আইনি জটিলতায় না পড়ে। এই প্রবন্ধে তালাকের বিভিন্ন পদ্ধতি, আইনি প্রক্রিয়া, এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচিত হবে, যা তালাকের সময় প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা প্রদান করবে।
তালাকের/ডিভোর্সের ধরনসমূহ
বাংলাদেশে তালাকের কয়েকটি ধরন রয়েছে:
- তালাক-এ-আহসান:
- প্রক্রিয়া: স্বামী একবার তালাক প্রদান করেন এবং স্ত্রী তিন মাসের অপেক্ষাকাল (ইদ্দত) পালন করেন।
- বৈধতা: ইদ্দতের সময়ে স্বামী-স্ত্রী পুনরায় মিলিত না হলে তালাক কার্যকর হয়। এটি সবচেয়ে মানবিক ও সহনশীল পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
- তালাক-এ-হাসান:
- প্রক্রিয়া: স্বামী তিন মাসে তিনবার তালাক প্রদান করেন, প্রতি মাসে একবার করে।
- বৈধতা: তৃতীয় তালাক প্রদান করার পর, ইদ্দতের সময় শেষ হলে তালাক কার্যকর হয়।
- তালাক-এ-বিদ’আত:
- প্রক্রিয়া: স্বামী একসঙ্গে তিনবার তালাক প্রদান করেন।
- বিতর্ক: এটি অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কিত এবং ইসলামী আইন অনুযায়ী ভিন্নমত রয়েছে। বেশিরভাগ আলেম এটি অনুমোদন করেন না।
[rpt name=”consultation-fee”]
তালাকের/ডিভোর্সের প্রক্রিয়া
তালাকের প্রক্রিয়া সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়:
- নোটিশ প্রদান:
- স্বামী বা স্ত্রীকে লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হয়, যেখানে তালাকের ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়।
- এই নোটিশটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিতে হয়।
- সমন্বয় সভা:
- নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান একটি সমন্বয় সভার ব্যবস্থা করেন।
- উভয় পক্ষকে এই সভায় উপস্থিত হতে হয় এবং সমন্বয় করার চেষ্টা করা হয়।
- ইদ্দত পালন:
- যদি সমন্বয় সভার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান না হয়, তবে স্ত্রীকে তিন মাসের ইদ্দত পালন করতে হয়।
- ইদ্দতের সময়ে পুনরায় মিলিত না হলে তালাক কার্যকর হয়।
- তালাকের রেজিস্ট্রেশন:
- তালাক কার্যকর হলে স্থানীয় রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালাক নিবন্ধন করতে হয়। এটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয়।
তালাকের পরবর্তী পদক্ষেপ
তালাকের/ডিভোর্সের পরে উভয় পক্ষের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে:
- মোহরানা:
- স্ত্রীর পাওনা মোহরানা প্রদান করতে হয়। এটি ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী স্ত্রীর অধিকার।
- সম্পত্তি ভাগাভাগি:
- বিবাহিত জীবনের যৌথ সম্পত্তি যদি থাকে তবে তা ভাগাভাগি করতে হয়। এটি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে করা উচিত।
- সন্তানদের প্রতিপালন:
- সন্তানের প্রতিপালন এবং হেফাজতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সন্তানের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার তালাকের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
আমরা আপনার তালাক/ডিভোর্স প্রক্রিয়াটি সহজতর করতে এখানে আছি। আপনার সমস্যার সমাধান এবং আইনি পরামর্শের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমাদের অভিজ্ঞ আইনজীবীরা আপনার পাশে আছে, যাতে আপনি আপনার জীবনের এই কঠিন সময়টি সহজে পার করতে পারেন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা তালাকের বিষয়ে আরও তথ্য প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের অফিসে ভিজিট করুন বা ফোনে যোগাযোগ করুন।
অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান রাশেদ আপনার আইনি পরামর্শদাতা
যোগাযোগের নম্বরঃ ০১৭৮৫৪৬০০৮৫
ইমেইল ঠিকানাঃ sparkadvocatesbd@gmail.com
অফিসের ঠিকানাঃ কয়া গোলাহাট বাজার, সৈয়দপুর, নীলফামারি।
আদালতের মাধ্যমে তালাক: বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে তালাকের প্রক্রিয়া শুধু স্বামীর উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আদালতের মাধ্যমেও তালাকের আবেদন করা যেতে পারে। আদালতের মাধ্যমে তালাক সাধারণত স্ত্রীর পক্ষে করা হয়, যখন স্বামী তালাক দিতে রাজি না হন বা স্ত্রীর জন্য পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়াটি “খুলা” এবং “ফাসখ” নামে পরিচিত। এখানে আমরা আদালতের মাধ্যমে তালাকের প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
আদালতের মাধ্যমে তালাকের/ডিভোর্সের ধরনসমূহ
- খুলা:
- প্রক্রিয়া: স্ত্রী তার স্বামীকে বিবাহ বিচ্ছেদের/ডিভোর্সের প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে মোহরানার কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ মওকুফ করতে রাজি হন। যদি স্বামী এই প্রস্তাবে সম্মতি দেন, তবে তালাক কার্যকর হয়।
- অন্যতা: যদি স্বামী সম্মতি না দেন, তাহলে স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে খুলার আবেদন করতে পারেন।
- ফাসখ:
- প্রক্রিয়া: স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের/ডিভোর্সের জন্য আবেদন করেন এবং আদালত বিবাহ বিচ্ছেদ মঞ্জুর করেন।
- কারণসমূহ: স্বামীর নিষ্ঠুরতা, ভরণ-পোষণ না দেওয়া, স্বামীর মানসিক বা শারীরিক অক্ষমতা ইত্যাদি।
আদালতের মাধ্যমে স্ত্রীর তালাকের/ডিভোর্সের কারণসমূহ
মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯-এর অধীনে স্ত্রী ৯টি কারণের যেকোনো একটি বা একাধিকের ভিত্তিতে আদালতে বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের জন্য আবেদন করতে পারেন। কারণগুলো হলো—
- স্বামী চার বছরের বেশি সময় নিরুদ্দেশ থাকলে।
- দুই বছর ধরে স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
- ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করে স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করলে।
- সাত বছর বা তার বেশি সময় স্বামী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে।
- কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে স্বামী তার দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
- বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা করার সময় পর্যন্ত বজায় থাকলে।
- স্বামী দুই বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকলে বা মারাত্মক যৌনব্যাধিতে আক্রান্ত থাকলে।
- নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হলে এবং সাবালকত্ব লাভের পর স্ত্রী বিয়ে অস্বীকার করলে (তবে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হলে এ প্রকার মামলা করা যাবে না)।
- স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করলে, যেমন শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, অবৈধ সম্পর্ক, নৈতিকতাবর্জিত জীবনযাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা, স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বাধা, বা পবিত্র কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী একাধিক স্ত্রীদের সমান ব্যবহার না করলে।
বাংলাদেশে তালাক: আইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া ও কারণসমূহ
ইসলামী শরিয়তে তালাককে/ডিভোর্সকে সর্বনিম্ন পর্যায়ের বৈধ কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো দাম্পত্য জীবনের সংহতি রক্ষা করা এবং বিবাহবিচ্ছেদ যেন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। যদিও তালাকের মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী কিছুটা মানসিক স্বস্তি পেতে পারেন, তবে এটি শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যারা তাদের মা-বাবার স্নেহ ও ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয় এবং ভঙ্গুর মানসিকতা নিয়ে বড় হয়।
যে কোনও যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন, তবে বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করতে হলে আইন অনুযায়ী কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
তালাকের/ডিভোর্সের প্রক্রিয়া
তালাকের প্রক্রিয়া সাধারণত একজন আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ পাঠানোর মাধ্যমে শুরু হয়। এছাড়াও, যদি বিয়ের কাবিননামায় ১৮ নম্বর কলামে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাকের অনুমতি না দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করতে পারেন।
তালাকের/ডিভোর্সের নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া
তালাকের/ডিভোর্সের নোটিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের ক্ষেত্রেই তালাকের নিয়ম প্রায় একই। বাংলাদেশে স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে স্বামীর বিরুদ্ধে তালাকের আবেদন করতে পারেন, তবে স্বামীর জন্য এই প্রক্রিয়া কিছুটা সীমিত।
আদালতের মাধ্যমে তালাকের প্রক্রিয়া
- আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া:
- প্রথমে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন, যিনি আপনাকে প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করবেন।
- আবেদন দাখিল:
- স্ত্রী আদালতে তালাকের/ডিভোর্সের জন্য আবেদন দাখিল করেন। এই আবেদনে তালাকের কারণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হয়।
- আবেদনটি পরিবার আদালতে দাখিল করতে হয়।
- সমন জারি:
- আদালত আবেদন গ্রহণ করার পর স্বামীকে সমন জারি করে। স্বামীকে নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
- শুনানি:
- আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনে এবং প্রমাণাদি সংগ্রহ করে।
- যদি আদালত তালাকের/ডিভোর্সের পক্ষে রায় প্রদান করে, তবে আদালত বিবাহ বিচ্ছেদের আদেশ জারি করে।
- ইদ্দত পালন:
- আদালতের আদেশের পর স্ত্রীকে তিন মাসের ইদ্দত পালন করতে হয়।
- ইদ্দতের সময়ে পুনরায় মিলিত না হলে তালাক কার্যকর হয়।
- রেজিস্ট্রেশন:
- তালাক কার্যকর হলে আদালতের আদেশের কপি স্থানীয় রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জমা দিতে হয় এবং তালাক নিবন্ধন করতে হয়।
তালাকের পরবর্তী পদক্ষেপ
তালাকের পরে উভয় পক্ষের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে:
- মোহরানা:
- স্ত্রীর পাওনা মোহরানা প্রদান করতে হয়। আদালতের আদেশ অনুযায়ী এটি নিশ্চিত করতে হয়।
- সম্পত্তি ভাগাভাগি:
- আদালতের মাধ্যমে যৌথ সম্পত্তি ভাগাভাগি করা যায়। আদালত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারে।
- সন্তানদের প্রতিপালন:
- সন্তানের হেফাজত ও প্রতিপালনের বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সন্তানের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার তালাকের/ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
আমরা আপনার তালাক প্রক্রিয়াটি সহজতর করতে এখানে আছি। আপনার সমস্যার সমাধান এবং আইনি পরামর্শের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমাদের অভিজ্ঞ আইনজীবীরা আপনার পাশে আছে, যাতে আপনি আপনার জীবনের এই কঠিন সময়টি সহজে পার করতে পারেন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা তালাকের বিষয়ে আরও তথ্য প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের অফিসে ভিজিট করুন বা ফোনে যোগাযোগ করুন।
আমাদের সেবাসমূহ:
- আইনি পরামর্শ
- তালাকের/ডিভোর্সের নোটিশ প্রস্তুতি
- সমন্বয় সভায় সহযোগিতা
- সম্পত্তি ভাগাভাগি সংক্রান্ত পরামর্শ
- সন্তানের হেফাজত সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং আপনার তালাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আজই উদ্যোগ নিন।
বাংলাদেশে তালাক/ডিভোর্স সম্পর্কিত সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
তালাকের/ডিভোর্সের ধরনসমূহ
প্রশ্ন: বাংলাদেশে তালাকের কয়েকটি ধরন কী কী?
উত্তর: বাংলাদেশে সাধারণত তিনটি ধরনের তালাক প্রচলিত:
- তালাক-এ-আহসান: স্বামী একবার তালাক প্রদান করেন এবং স্ত্রী তিন মাসের ইদ্দত পালন করেন।
- তালাক-এ-হাসান: স্বামী তিন মাসে তিনবার তালাক প্রদান করেন, প্রতি মাসে একবার করে।
- তালাক-এ-বিদ’আত: স্বামী একসঙ্গে তিনবার তালাক প্রদান করেন। এটি বিতর্কিত এবং অনেক আলেম এটি অনুমোদন করেন না।
তালাকের/ডিভোর্সের প্রক্রিয়া
প্রশ্ন: তালাকের প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়?
উত্তর: তালাকের/ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে:
- নোটিশ প্রদান: স্বামী বা স্ত্রী লিখিত নোটিশ প্রদান করেন এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন।
- সমন্বয় সভা: নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান একটি সমন্বয় সভার ব্যবস্থা করেন।
- ইদ্দত পালন: সমন্বয় না হলে স্ত্রীকে তিন মাসের ইদ্দত পালন করতে হয়।
- তালাকের রেজিস্ট্রেশন: তালাক/ডিভোর্স কার্যকর হলে স্থানীয় রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালাক নিবন্ধন করতে হয়।
তালাকের পরবর্তী পদক্ষেপ
প্রশ্ন: তালাকের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী কী?
উত্তর: তালাকের/ডিভোর্সের পরে নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়:
- মোহরানা প্রদান: স্ত্রীর পাওনা মোহরানা প্রদান করতে হয়।
- সম্পত্তি ভাগাভাগি: যৌথ সম্পত্তি ভাগাভাগি করতে হয়।
- সন্তানদের প্রতিপালন: সন্তানের প্রতিপালন এবং হেফাজতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
আদালতের মাধ্যমে তালাক
প্রশ্ন: স্ত্রী কিভাবে আদালতের মাধ্যমে তালাক/ডিভোর্স করতে পারেন?
উত্তর: স্ত্রী আদালতে “খুলা” বা “ফাসখ” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তালাক করতে পারেন। আদালতে তালাকের আবেদন করার জন্য নিচের কারণগুলো থাকতে হবে:
- স্বামী চার বছরের বেশি সময় নিরুদ্দেশ থাকলে।
- দুই বছর ধরে স্বামী ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
- স্বামীর নিষ্ঠুরতা, মানসিক বা শারীরিক অক্ষমতা ইত্যাদি।
মোহরানা ও সম্পত্তি ভাগাভাগি
প্রশ্ন: মোহরানা ও সম্পত্তি ভাগাভাগির প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়?
উত্তর: মোহরানা স্ত্রীর অধিকার হিসেবে প্রদান করতে হয়। যৌথ সম্পত্তি ভাগাভাগি উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে বা আদালতের মাধ্যমে করা যায়।
সন্তানের প্রতিপালন ও হেফাজত
প্রশ্ন: সন্তানের প্রতিপালন ও হেফাজতের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
উত্তর: সন্তানের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে আদালত বা উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে প্রতিপালন ও হেফাজতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আইনি সহায়তা
প্রশ্ন: তালাকের প্রক্রিয়ায় আইনি সহায়তা কিভাবে পাওয়া যায়?
উত্তর: তালাকের প্রক্রিয়া সহজতর করতে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা পেতে পারেন।
যোগাযোগের নম্বর: ০১৭৮৫৪৬০০৮৫
ইমেইল ঠিকানাঃ sparkadvocatesbd@gmail.com
অফিসের ঠিকানাঃ কয়া গোলাহাট বাজার, সৈয়দপুর, নীলফামারি।
তালাকের/ডিভোর্সের আইনি প্রক্রিয়া
প্রশ্ন: বাংলাদেশে তালাকের/ডিভোর্সের আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়?
উত্তর: তালাকের আইনি প্রক্রিয়া নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে:
- নোটিশ প্রদান: তালাকের ইচ্ছা প্রকাশ করে স্বামী বা স্ত্রী লিখিত নোটিশ প্রদান করেন।
- সমন্বয় সভা: নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা সমন্বয় সভার ব্যবস্থা করে।
- ইদ্দত পালন: সমন্বয় না হলে স্ত্রীকে তিন মাসের ইদ্দত পালন করতে হয়।
- রেজিস্ট্রেশন: ইদ্দত শেষ হলে স্থানীয় রেজিস্ট্রারে তালাক নিবন্ধন করতে হয়।
ইদ্দতের সময়সীমা
প্রশ্ন: ইদ্দতের সময়সীমা কতদিন?
উত্তর: সাধারণত ইদ্দতের সময়সীমা তিন মাস। তবে, স্ত্রী যদি গর্ভবতী হন, তাহলে সন্তান জন্ম নেওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হয়।
সমন্বয় সভার গুরুত্ব
প্রশ্ন: সমন্বয় সভার গুরুত্ব কী?
উত্তর: সমন্বয় সভায় উভয় পক্ষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এটি বিবাহের সংহতি বজায় রাখতে এবং তালাক রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
মোহরানা প্রদান না করলে কী হবে?
প্রশ্ন: যদি স্বামী মোহরানা প্রদান না করেন, তাহলে কী হবে?
উত্তর: মোহরানা স্ত্রীর অধিকার। যদি স্বামী মোহরানা প্রদান না করেন, স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে তা আদায় করতে পারেন।
সন্তানদের হেফাজত
প্রশ্ন: সন্তানের হেফাজত কারা পাবেন?
উত্তর: সন্তানের হেফাজতের বিষয়ে আদালত সন্তানের সর্বোচ্চ স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। সাধারণত মায়ের হেফাজতে দেওয়া হয়, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
দ্বিতীয় বিয়ের প্রয়োজনীয়তা
প্রশ্ন: দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য কী কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?
উত্তর: দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। প্রথম স্ত্রীর সম্মতি এবং উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আদালতে আবেদন করতে হয়।
খুলা ও ফাসখ
প্রশ্ন: খুলা ও ফাসখের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর:
- খুলা: স্ত্রী তার স্বামীকে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে মোহরানার কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ মওকুফ করেন। স্বামী সম্মতি দিলে তালাক কার্যকর হয়।
- ফাসখ: স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের/ জন্য আবেদন করেন এবং আদালত বিবাহ বিচ্ছেদ/ডিভোর্সের মঞ্জুর করে।
তালাকের/ডিভোর্সের পর পুনরায় বিয়ে
প্রশ্ন: তালাকের পর পুনরায় বিয়ে করতে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?
উত্তর: ইদ্দতের সময় শেষ হলে পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন। সাধারণত ইদ্দতের সময়সীমা তিন মাস।
তালাকের/ডিভোর্সের নোটিশের নমুনা
প্রশ্ন: তালাকের নোটিশ কিভাবে লিখতে হয়?
উত্তর: তালাকের নোটিশে স্বামীর বা স্ত্রীর নাম, ঠিকানা, বিবাহের তারিখ, তালাকের তারিখ ও ইদ্দতের সময়সীমা উল্লেখ করতে হয়। এছাড়া, তালাকের কারণও উল্লেখ করা যেতে পারে।
স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তালাক/ডিভোর্স
প্রশ্ন: মৌখিকভাবে তালাক দিলে কি তা বৈধ হবে?
উত্তর: মৌখিক তালাকের ক্ষেত্রে লিখিত নোটিশ প্রদান এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা আবশ্যক। মৌখিক তালাক আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়, তাই লিখিত নোটিশ প্রদান এবং নিবন্ধন প্রয়োজন।
তালাকের নোটিশ না পেলে
প্রশ্ন: যদি তালাকের নোটিশ না পাওয়া যায়, তাহলে কী হবে?
উত্তর: তালাকের নোটিশ না পেলে তালাক বৈধ হবে না। নোটিশ প্রদান এবং প্রাপ্তির প্রমাণ থাকতে হবে।
তালাকের/ডিভোর্সের পরে ভরণপোষণ
প্রশ্ন: তালাকের পরে স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে হবে কি?
উত্তর: তালাকের/ডিভোর্সের পরে স্ত্রীর ইদ্দতের সময় ভরণপোষণ দেওয়া স্বামীর দায়িত্ব। এছাড়া, সন্তানের ভরণপোষণও স্বামীকে দিতে হবে।
কোর্ট ফি এবং মামলা খরচ
প্রশ্ন: আদালতের মাধ্যমে তালাকের জন্য কোর্ট ফি এবং অন্যান্য খরচ কত হতে পারে?
উত্তর: কোর্ট ফি এবং অন্যান্য খরচ মামলার জটিলতা ও আইনজীবীর ফিসের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। এজন্য অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই সাধারণ জিজ্ঞাসাগুলি তালাকের প্রক্রিয়া এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করবে। আরও তথ্য বা সহায়তার প্রয়োজন হলে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তালাকের/ডিভোর্সের নোটিশের নমুনা
নিচে একটি তালাকের নোটিশের নমুনা দেওয়া হলো যা আপনি আপনার প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন।
তালাকের/ডিভোর্সের নোটিশ
তারিখ: [তারিখ লিখুন]
প্রেরকের নাম: [স্বামীর নাম]
প্রেরকের ঠিকানা: [স্বামীর ঠিকানা]
প্রাপকের নাম: [স্ত্রীর নাম]
প্রাপকের ঠিকানা: [স্ত্রীর ঠিকানা]
প্রতি, চেয়ারম্যান, [ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন নাম] [ঠিকানা]
বিষয়: তালাক প্রদান প্রসঙ্গে নোটিশ
জনাব/জনাবা,
আমি, [স্বামীর নাম], পিতা/মাতা [স্বামীর পিতার নাম], ঠিকানা [স্বামীর ঠিকানা], আমার স্ত্রী [স্ত্রীর নাম], পিতা/মাতা [স্ত্রীর পিতার নাম], ঠিকানা [স্ত্রীর ঠিকানা], কে এই মর্মে লিখিত নোটিশ প্রদান করছি যে, আমি ইসলামী শরিয়ত এবং বাংলাদেশ পারিবারিক আইন অনুযায়ী [তালাকের ধরন লিখুন, যেমন: তালাক-এ-আহসান/তালাক-এ-হাসান/তালাক-এ-বিদ’আত] মাধ্যমে তালাক প্রদান করতে ইচ্ছুক।
আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবন্ধন [তারিখ] তারিখে সম্পন্ন হয়েছিল। বর্তমানে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে, যা নিরসন করার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
এমতাবস্থায়, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে, বাংলাদেশ পারিবারিক আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তালাকের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করবেন।
আমি আশা করি যে, আপনি এই নোটিশটি প্রাপ্তির পর ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং সমন্বয় সভার আয়োজন করবেন।
ধন্যবাদান্তে,
[স্বাক্ষর] [স্বামীর নাম] [তারিখ]
উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ:
- তারিখ ও ঠিকানা: নোটিশের তারিখ এবং প্রেরক ও প্রাপকের সঠিক ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
- কার্যকারিতা: নোটিশের কার্যকারিতা এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা।
- সমন্বয় সভা: চেয়ারম্যানের কাছে সমন্বয় সভার আয়োজনের অনুরোধ করা।
উল্লেখিত নমুনাটি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সামান্য পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারেন। যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান রাশেদ আপনার আইনি পরামর্শদাতা
যোগাযোগের নম্বর: ০১৭৮৫৪৬০০৮৫
ইমেইল ঠিকানাঃ sparkadvocatesbd@gmail.com
অফিসের ঠিকানাঃ কয়া গোলাহাট বাজার, সৈয়দপুর, নীলফামারি।