অনলাইনে প্রতারণা দিন দিন বাড়ছে, এবং এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ই-কমার্স প্রতারনা, কেনাবেচার প্রতারণা, ভুয়া চাকরির অফার, ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ ‘হ্যাক’, ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম, ব্ল্যাকমেইলিং, ডলার প্রতারণা থাই লটারি/জুয়া, অনলাইন জুয়া, ক্যাসিনো এবং ভিসা প্রতারণা। এই প্রতারণাগুলি সাধারণত অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের থেকে অর্থ আদায় করে। নিচে প্রতারণার বিভিন্ন ধরন এবং প্রতারণার হাত থেকে বাঁচার উপায়গুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
Table of Contents
Toggle
[rpt name=”consultation-fee”]
আমার সাথে যোগাযোগ করুন:
আমি, অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান রাশেদ, অনলাইনে প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনার পাশে আছি। যদি আপনি অনলাইনে প্রতারণার শিকার হন, তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আমি আপনাকে সঠিক আইনি পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করব।
যোগাযোগের ঠিকানা:
- মোবাইল: ০১৭৮৫৪৬০০৮৫
- ইমেল: sparkadvocatesbd@gmail.com
অনলাইনে প্রতারণার শিকার হয়ে হতাশ না হয়ে, সঠিক আইনি পদক্ষেপ নিয়ে নিজের অধিকার রক্ষা করুন।
ই-কমার্স প্রতারণা
ই-কমার্স প্রতারণা বর্তমান সময়ে অন্যতম প্রচলিত অনলাইন প্রতারণার একটি রূপ। এই ধরনের প্রতারণা সাধারণত অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঘটে। এখানে প্রতারণার বিস্তারিত তথ্য, উদাহরণ, এবং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় আলোচনা করা হলো।
বিবরণ
ই-কমার্স প্রতারণা তখন ঘটে যখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য কেনাবেচার প্রক্রিয়ায় প্রতারকরা ক্রেতাদের ঠকানোর চেষ্টা করে। প্রতারকরা বিভিন্ন উপায়ে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেয়:
- নিম্নমানের পণ্য প্রদান: অনলাইনে অর্ডার করা পণ্যের পরিবর্তে নিম্নমানের বা ভিন্ন পণ্য পাঠানো হয়।
- পণ্য না পাওয়া: গ্রাহক পণ্য অর্ডার করার পর পণ্য পাঠানো হয় না, অথচ অর্থ নেয়া হয়।
- ভুয়া ওয়েবসাইট: প্রতারকরা ভুয়া ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে যেখানে পণ্যের লোভনীয় অফার দেওয়া হয়।
উদাহরণ
১. নিম্নমানের পণ্য: একজন গ্রাহক একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে মোবাইল ফোন অর্ডার করেছিলেন। প্যাকেজ ডেলিভারি হওয়ার পর তিনি দেখতে পান যে প্যাকেটের ভিতরে একটি পুরনো ও নিম্নমানের মোবাইল রয়েছে।
২. পণ্য না পাওয়া: একজন গ্রাহক অনলাইনে একটি দামী ল্যাপটপ অর্ডার করেন এবং তার জন্য পুরো অর্থ প্রদান করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পরেও ল্যাপটপটি তার কাছে পৌঁছেনি এবং ওয়েবসাইটটি বন্ধ হয়ে যায়।
৩. ভুয়া ওয়েবসাইট: একজন গ্রাহক একটি নতুন ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে পোশাক অর্ডার করেন। ওয়েবসাইটটি প্রথমে যথেষ্ট পেশাদার মনে হলেও, অর্ডার এবং অর্থপ্রদানের পর গ্রাহক আর ওয়েবসাইটটির সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি এবং পণ্যও পাননি।
প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
১. বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করুন: পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করুন।
- গ্রাহক রিভিউ পড়ুন: পণ্য কেনার আগে অন্যান্য গ্রাহকদের রিভিউ ও রেটিং পড়ুন। এতে করে আপনি পণ্যের গুণমান সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
- কাস্টমার সার্ভিস যাচাই করুন: ওয়েবসাইটটির কাস্টমার সার্ভিস সাপোর্ট ঠিকমত কাজ করছে কিনা যাচাই করুন। ফোন নম্বর বা ইমেইল এড্রেস সঠিক কিনা নিশ্চিত করুন।
- পেমেন্ট পদ্ধতি সুরক্ষিত করুন: ক্রেডিট কার্ড, পেপাল বা অন্যান্য নিরাপদ পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করুন যেখানে প্রয়োজনে রিফান্ড পেতে পারেন।
- ওয়েবসাইটের ঠিকানা ও নিরাপত্তা চিহ্ন দেখুন: ওয়েবসাইটের ইউআরএল এড্রেসে “https://” এর উপস্থিতি এবং একটি তালা চিহ্ন নিশ্চিত করুন যা সাইটের নিরাপত্তা নির্দেশ করে।
- বিশেষ অফারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন: অতিরিক্ত লোভনীয় অফার থেকে সতর্ক থাকুন। খুব সস্তায় দামী পণ্যের প্রস্তাব অনেক সময় প্রতারণার ইঙ্গিত হতে পারে।
এইসব সতর্কতা মেনে চললে ই-কমার্স প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
অনলাইন প্রতারণা থেকে বাচার উপায়
ব্ল্যাকমেইলিং
ব্ল্যাকমেইলিং প্রতারণার একটি গুরুতর ধরন যেখানে প্রতারকরা ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি হাতিয়ে নিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলে টাকা বা অন্যান্য সুবিধা আদায় করে। এই ধরনের প্রতারণার বিস্তারিত তথ্য, উদাহরণ, এবং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় নিচে আলোচনা করা হলো।
বিবরণ
ব্ল্যাকমেইলিং বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে:
- ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও চুরি: প্রতারকরা ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে তাদের প্রকাশ করার হুমকি দেয়।
- বিষয়ভিত্তিক ব্ল্যাকমেইল: কোনো গোপন তথ্য ফাঁস করার হুমকি দিয়ে টাকা বা অন্যান্য সুবিধা আদায় করা হয়।
- অনলাইন সম্পর্ক: প্রতারকরা অনলাইন সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে এবং পরে তা ব্ল্যাকমেইল করার কাজে ব্যবহার করে।
- ডেটা ব্রিচ: কোনো প্রতিষ্ঠানের ডেটা হ্যাক করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করা হয়।
উদাহরণ
১. ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও চুরি: একজন ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে একজন অপরিচিত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করে। কিছু দিন পরে তিনি ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও শেয়ার করেন। পরে প্রতারক তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে এবং ছবি বা ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করে।
২. বিষয়ভিত্তিক ব্ল্যাকমেইল: একজন ব্যবসায়ী একটি ইমেইল পান যেখানে তার ব্যবসার কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করার হুমকি দেয়া হয়। তাকে বলা হয় যে এই তথ্য প্রকাশ না করার জন্য কিছু টাকা দিতে হবে।
৩. অনলাইন সম্পর্ক: একজন ব্যক্তি একটি ডেটিং ওয়েবসাইটে একজন প্রতারকের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে প্রতারক তার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে এবং ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতে শুরু করে।
৪. ডেটা ব্রিচ: একটি প্রতিষ্ঠানের ডেটা হ্যাক করে হ্যাকাররা প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করে।
প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
১. ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখুন: কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাথে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
- সতর্ক থাকুন: কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার আগে সতর্ক থাকুন এবং যাচাই করুন।
- দৃঢ় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন: সব অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী এবং আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
- দুই-স্তরবিশিষ্ট প্রমাণীকরণ (2FA) চালু করুন: দুই-স্তরবিশিষ্ট প্রমাণীকরণ চালু করুন যাতে আপনার অ্যাকাউন্ট অতিরিক্ত সুরক্ষিত থাকে।
- অনলাইন সম্পর্কে সতর্ক থাকুন: অপরিচিত বা সামান্য পরিচিত ব্যক্তির সাথে অনলাইন সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন এবং ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
- অপরিচিত লিঙ্ক থেকে দূরে থাকুন: কোনো অপরিচিত ইমেইল বা মেসেজে প্রাপ্ত লিঙ্কে ক্লিক করবেন না যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে।
- নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করুন: আপনার ডিভাইসে নিরাপত্তা সফটওয়্যার ইনস্টল করুন এবং নিয়মিত আপডেট রাখুন।
- যাচাই করুন: ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি শেয়ার করার আগে সবসময় যাচাই করুন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন: ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করুন এবং সাহায্য নিন।
এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে ব্ল্যাকমেইলিং প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
থাই লটারি/জুয়া প্রতারণা
থাই লটারি বা জুয়া প্রতারণা হলো এমন একটি কৌশল, যেখানে প্রতারকরা মানুষকে আকর্ষণীয় পুরস্কার জেতার লোভ দেখিয়ে অর্থ আদায় করে। সাধারণত এই প্রতারণা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। প্রতারকরা ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে, যেখানে লোকজন টাকা জমা দিয়ে লটারি টিকিট কিনতে পারে।
কৌশল:
- ভুয়া ওয়েবসাইট: প্রতারকরা মূলত ভুয়া লটারি ওয়েবসাইট তৈরি করে যেখানে লোকজন টাকা দিয়ে লটারি টিকিট কিনতে পারে।
- ইমেল ও এসএমএস: তারা ইমেল বা এসএমএস এর মাধ্যমে মানুষকে জানায় যে তারা লটারি জিতেছে এবং তাদের তথ্য সরবরাহ করতে হবে পুরস্কার সংগ্রহের জন্য।
- সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন: ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মত সোশ্যাল মিডিয়াতে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে।
কিভাবে কাজ করে:
- মানুষ বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয় এবং লিঙ্কে ক্লিক করে।
- তারা লটারি টিকিট কেনার জন্য তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও অর্থ প্রদান করে।
- টিকিট ক্রয়ের পর তারা জানতে পারে যে এটি একটি প্রতারণা ছিল।
অনলাইন জুয়া প্রতারণা
অনলাইন জুয়া প্রতারণা সাধারণত বিভিন্ন অনলাইন ক্যাসিনো ও বেটিং সাইটের মাধ্যমে ঘটে। এই সাইটগুলি মানুষকে সহজে অর্থ জেতার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি প্রতারণার ফাঁদ। এই সাইটগুলি থেকে পাওয়া অর্থ সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম, এবং বেশিরভাগ সময়েই মানুষ তাদের টাকা হারায়।
কৌশল:
- ভুয়া জুয়া সাইট: প্রতারকরা ভুয়া অনলাইন ক্যাসিনো বা বেটিং সাইট তৈরি করে।
- প্রলোভন: তারা সহজেই অর্থ জেতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে।
- অতিরিক্ত বোনাস: নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য অবাস্তব বোনাস অফার করে।
কিভাবে কাজ করে:
- ব্যবহারকারীরা সাইটে রেজিস্টার করে এবং টাকা জমা দেয়।
- প্রাথমিকভাবে কিছু অর্থ জিতলেও, পরে তারা সব টাকা হারায়।
- শেষ পর্যন্ত সাইটটি বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যবহারকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পায় না।
ক্যাসিনো প্রতারণা
ক্যাসিনো প্রতারণা সাধারণত ভুয়া অনলাইন ক্যাসিনো সাইটের মাধ্যমে ঘটে। এই সাইটগুলি প্রাথমিকভাবে বৈধ ক্যাসিনোর মত মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলি কেবলমাত্র মানুষের টাকা চুরি করার জন্য তৈরি করা হয়।
কৌশল:
- ফেক ক্যাসিনো অ্যাপ্লিকেশন: প্রতারকরা ভুয়া ক্যাসিনো অ্যাপ তৈরি করে।
- সোশ্যাল মিডিয়া ও গুগল অ্যাডস: বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে অ্যাপ ডাউনলোড করায়।
- ভুয়া জ্যাকপট: ব্যবহারকারীদের মিথ্যা জ্যাকপট বা বোনাস দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়।
কিভাবে কাজ করে:
- ব্যবহারকারীরা অ্যাপ ডাউনলোড করে এবং টাকা জমা দেয়।
- কিছু সময় পর তারা জানতে পারে যে তাদের জিতানো অর্থ তারা তুলতে পারছে না।
- পরে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায় বা অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হয়।
ভিসা প্রতারণা
ভিসা প্রতারণা হলো এমন একটি কৌশল যেখানে প্রতারকরা ভুয়া এজেন্সি বা কোম্পানি তৈরি করে মানুষকে বিদেশে যাওয়ার ভিসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা সাধারণত উচ্চ ফি নেয় এবং শেষে কোনো সেবা প্রদান করে না।
কৌশল:
- ভুয়া এজেন্সি: প্রতারকরা ভুয়া ভিসা এজেন্সি তৈরি করে।
- উচ্চ ফি: ভিসা প্রোসেসিং ফি হিসেবে উচ্চ পরিমাণ অর্থ আদায় করে।
- নকল ডকুমেন্ট: ভুয়া ডকুমেন্ট প্রদান করে বা সত্যিকারের ডকুমেন্টের নকল তৈরি করে।
কিভাবে কাজ করে:
- মানুষ বিজ্ঞাপন দেখে বা রেফারেন্স পেয়ে এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে।
- তারা ভিসা প্রসেসিং ফি প্রদান করে এবং অপেক্ষা করে।
- এক সময় এজেন্সি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় বা কোনো প্রকার সেবা প্রদান করে না।
কেনাবেচার প্রতারণা
কেনাবেচার প্রতারণা সাধারণত অনলাইন মার্কেটপ্লেস বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঘটে, যেখানে বিক্রেতা বা ক্রেতা উভয়েই প্রতারণা করতে পারে। এই ধরনের প্রতারণার বিস্তারিত তথ্য, উদাহরণ, এবং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় নিচে আলোচনা করা হলো।
বিবরণ
কেনাবেচার প্রতারণায় বিভিন্ন উপায়ে গ্রাহকদের ঠকানো হয়:
- মিথ্যা পণ্য বিবরণ: বিক্রেতা পণ্যের ভুয়া বিবরণ দিয়ে গ্রাহককে ভুল পথে পরিচালিত করে।
- পণ্য না পাঠানো: বিক্রেতা টাকা নেওয়ার পর পণ্য পাঠায় না।
- নিম্নমানের পণ্য: বিক্রেতা পণ্যের গুণমান নিয়ে মিথ্যা কথা বলে এবং গ্রাহক নিম্নমানের পণ্য পায়।
- ভুয়া ক্রেতা: ক্রেতা পণ্যের জন্য টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, পণ্য পাওয়ার পর টাকা দেয় না।
উদাহরণ
১. মিথ্যা পণ্য বিবরণ: একজন ব্যক্তি একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একটি ব্র্যান্ডেড ঘড়ি অর্ডার করেন, যেখানে ঘড়িটির বিবরণে বলা হয় এটি সম্পূর্ণ নতুন এবং আসল। কিন্তু ডেলিভারির পর তিনি দেখতে পান এটি একটি নকল এবং ব্যবহৃত ঘড়ি।
২. পণ্য না পাঠানো: একজন ব্যক্তি একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একটি ল্যাপটপ বিক্রি করতে চেয়েছিল। ক্রেতা তাকে টাকা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও, ল্যাপটপ পাওয়ার পর টাকা পাঠায়নি।
৩. নিম্নমানের পণ্য: একজন ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একটি নতুন মোবাইল ফোন কেনার জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেখে বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করেন। মোবাইল ফোনটি অর্ডার করার পর এবং টাকা পাঠানোর পর তিনি দেখতে পান যে ফোনটি ব্যবহৃত এবং নিম্নমানের।
৪. ভুয়া ক্রেতা: একজন ব্যক্তি অনলাইনে একটি দামি ক্যামেরা বিক্রি করছিলেন। ক্রেতা ক্যামেরাটি পাওয়ার পর টাকা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ক্যামেরাটি পাওয়ার পর আর টাকা পাঠায়নি এবং যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়।
প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
১. বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন: পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য অনলাইন মার্কেটপ্লেস বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন।
২. প্রোফাইল যাচাই করুন: ক্রেতা বা বিক্রেতার প্রোফাইল, রেটিং, এবং রিভিউ যাচাই করুন। নতুন বা অপরিচিত প্রোফাইল থেকে সতর্ক থাকুন।
৩. নগদ লেনদেন এড়িয়ে চলুন: ক্রেডিট কার্ড, পেপাল বা অন্যান্য নিরাপদ পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করুন যেখানে প্রয়োজনে রিফান্ড পেতে পারেন।
৪. পণ্য গ্রহণের আগে অর্থ প্রদান করবেন না: পণ্য না পাওয়া পর্যন্ত বা পণ্যটি যাচাই না করা পর্যন্ত অর্থ প্রদান করবেন না।
৫. কাস্টমার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করুন: সমস্যার ক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটপ্লেস বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কাস্টমার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদের সাহায্য নিন।
৬. বিশেষ অফারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন: অতিরিক্ত লোভনীয় অফার থেকে সতর্ক থাকুন। অনেক সময় এই ধরনের অফার প্রতারণার ইঙ্গিত হতে পারে।
এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে কেনাবেচার প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
ভুয়া চাকরির অফার
ভুয়া চাকরির অফার প্রতারণার একটি সাধারণ ধরন যা সাধারণত ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঘটে। প্রতারকরা আকর্ষণীয় চাকরির অফার দিয়ে প্রার্থীদের ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করে। এখানে প্রতারণার বিস্তারিত তথ্য, উদাহরণ, এবং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় আলোচনা করা হলো।
বিবরণ
ভুয়া চাকরির অফারে প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে:
- আকর্ষণীয় চাকরির অফার: প্রার্থীদের লোভনীয় চাকরির অফার দিয়ে ফাঁদে ফেলা হয়, যেখানে উচ্চ বেতন, সুবিধা, এবং প্রমোশনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
- আবেদন ফি বা প্রসেসিং চার্জ: চাকরির আবেদন করতে বা চাকরি পাওয়ার আগে কিছু ফি বা প্রসেসিং চার্জ প্রদান করতে বলা হয়।
- ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া: প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন পাসপোর্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ইত্যাদি চাওয়া হয়, যা পরে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হয়।
- ভুয়া ইন্টারভিউ ও চাকরি নিশ্চিতকরণ: ইন্টারভিউর নামে প্রার্থীদের ফাঁদে ফেলা হয় এবং চাকরি পাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়।
উদাহরণ
১. আকর্ষণীয় চাকরির অফার: একজন ব্যক্তি একটি ইমেইল পেল যেখানে বলা হয় যে তিনি একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে উচ্চ বেতনের চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। চাকরির অফারটি দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল এবং তাকে আবেদন করতে বলা হয়।
২. আবেদন ফি বা প্রসেসিং চার্জ: একজন প্রার্থী একটি ওয়েবসাইটে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দেখেন এবং আবেদন করার পর তাকে কিছু প্রসেসিং ফি দিতে বলা হয়। টাকা জমা দেওয়ার পর তিনি আর কোনো সাড়া পান না।
৩. ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া: একজন প্রার্থী একটি চাকরির অফার পায় এবং তাকে চাকরি পাওয়ার আগে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন পাসপোর্ট নম্বর এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দিতে বলা হয়। পরে তিনি বুঝতে পারেন এটি একটি প্রতারণা।
প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
১. বিশ্বস্ত উৎস থেকে চাকরির আবেদন করুন: পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য জব পোর্টাল বা কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে চাকরির জন্য আবেদন করুন।
২. ইমেইল ও ওয়েবসাইট যাচাই করুন: চাকরির অফার ইমেইল বা ওয়েবসাইটের সত্যতা যাচাই করুন। সরকারি ডোমেইন (.gov) বা কোম্পানির অফিসিয়াল ডোমেইন (.com) থেকে প্রাপ্ত ইমেইল অধিকতর নির্ভরযোগ্য।
৩. আবেদন ফি বা প্রসেসিং চার্জ এড়িয়ে চলুন: কোনো প্রকৃত কোম্পানি চাকরির জন্য আবেদন ফি বা প্রসেসিং চার্জ দাবি করবে না। এই ধরনের চাহিদা প্রতারণার ইঙ্গিত হতে পারে।
৪. ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে সতর্ক থাকুন: ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে কোম্পানির সত্যতা যাচাই করুন।
৫. অফিসিয়াল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করুন: কোম্পানির সাথে অফিসিয়াল ইমেইল বা ফোন নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন এবং চাকরির অফার যাচাই করুন।
৬. অন্যান্য প্রার্থীদের পর্যালোচনা পড়ুন: যদি সম্ভব হয়, অন্যান্য প্রার্থীদের পর্যালোচনা ও অভিজ্ঞতা পড়ুন যারা সেই একই কোম্পানিতে আবেদন করেছে।
এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে ভুয়া চাকরির অফারের প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ ‘হ্যাক’
ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ হ্যাকিং বর্তমানে একটি সাধারণ এবং গুরুতর প্রতারণা। হ্যাকাররা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজ হ্যাক করে এবং তাদের মাধ্যমে প্রতারণামূলক কার্যকলাপ পরিচালনা করে। এখানে ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ হ্যাকিংয়ের বিস্তারিত তথ্য, উদাহরণ, এবং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় আলোচনা করা হলো।
বিবরণ
ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ হ্যাকিং বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে:
- ফিশিং: হ্যাকাররা ভুয়া লগইন পেজ তৈরি করে ব্যবহারকারীদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন তথ্য চুরি করে।
- ম্যালওয়্যার: হ্যাকাররা ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসযুক্ত লিঙ্ক পাঠিয়ে ব্যবহারকারীদের ডিভাইসে প্রবেশ করে এবং অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
- পাসওয়ার্ড হ্যাকিং: দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে গ্রুপ বা পেজের অ্যাডমিন অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে।
- ভুয়া নোটিফিকেশন: হ্যাকাররা ফেসবুকের নামে ভুয়া নোটিফিকেশন পাঠিয়ে ব্যবহারকারীদের থেকে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে।
উদাহরণ
১. ফিশিং: একজন পেজ অ্যাডমিন একটি ইমেইল পান যেখানে বলা হয় তার ফেসবুক পেজের সিকিউরিটি আপডেট করতে হবে এবং একটি লিঙ্কে ক্লিক করতে বলা হয়। লিঙ্কে ক্লিক করার পর তিনি একটি ভুয়া ফেসবুক লগইন পেজে প্রবেশ করেন এবং তার লগইন তথ্য দিয়ে দেন। এরপর তার পেজ হ্যাক হয়ে যায়।
২. ম্যালওয়্যার: একজন গ্রুপ অ্যাডমিন একটি মেসেজ পান যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট দেখতে বলা হয়। ডকুমেন্টের লিঙ্কে ক্লিক করার পর তার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায় এবং তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ হ্যাকারদের হাতে চলে যায়।
৩. পাসওয়ার্ড হ্যাকিং: একজন পেজ অ্যাডমিন একটি দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতেন। হ্যাকাররা তার পাসওয়ার্ড অনুমান করে তার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে এবং পেজের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
১. দৃঢ় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন: শক্তিশালী ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ডে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা, এবং বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করুন।
২. দুই-স্তরবিশিষ্ট প্রমাণীকরণ (2FA) চালু করুন: দুই-স্তরবিশিষ্ট প্রমাণীকরণ চালু করলে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশের জন্য একটি অতিরিক্ত কোড প্রয়োজন হবে যা হ্যাকারদের জন্য প্রবেশ করা কঠিন করে তুলবে।
৩. ফিশিং ইমেইল থেকে সতর্ক থাকুন: অপরিচিত ইমেইল বা মেসেজে প্রাপ্ত লিঙ্কে ক্লিক করার আগে তার সত্যতা যাচাই করুন।
৪. বিশ্বস্ত ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন: শুধুমাত্র নিরাপদ ও পরিচিত ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করুন।
৫. নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন: নিয়মিত আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করবেন না।
৬. নিরাপত্তা আপডেট ব্যবহার করুন: আপনার ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যারের নিরাপত্তা আপডেট ইনস্টল করুন।
৭. ফেসবুকের সিকিউরিটি চেকআপ ব্যবহার করুন: ফেসবুকের সিকিউরিটি চেকআপ টুল ব্যবহার করে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা যাচাই করুন এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করুন।
এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ হ্যাকিংয়ের প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব।
ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম
ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম একটি সাধারণ প্রতারণার ধরন যা সাধারণত অনলাইনে বা ফোনের মাধ্যমে ঘটে। প্রতারকরা উচ্চ রিটার্নের লোভ দেখিয়ে লোকজনকে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করে এবং তাদের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এখানে ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যামের বিস্তারিত তথ্য, উদাহরণ, এবং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় আলোচনা করা হলো।
বিবরণ
ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যামে প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে:
- উচ্চ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি: অস্বাভাবিক উচ্চ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় যা সাধারণত বাস্তবসম্মত নয়।
- সুপরিচিত কোম্পানির নাম ব্যবহার: সুপরিচিত কোম্পানির নাম ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস অর্জন করা হয়।
- পিরামিড স্কিম: প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের প্রাথমিক লাভ দিয়ে নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা হয়।
- ভুয়া ওয়েবসাইট ও ডকুমেন্ট: ভুয়া ওয়েবসাইট ও ডকুমেন্ট তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলা হয়।
- অ্যাকাউন্ট ফ্রিজিং: বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে প্রতারকরা পালিয়ে যায়।
উদাহরণ
১. উচ্চ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি: একজন ব্যক্তি অনলাইনে একটি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম দেখতে পান যেখানে ১০০% রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। তিনি টাকা বিনিয়োগ করেন এবং প্রথম কয়েক মাস লাভ পান, কিন্তু পরবর্তীতে প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ হয়ে যায় এবং তার অর্থ ফিরে পান না।
২. সুপরিচিত কোম্পানির নাম ব্যবহার: একজন ব্যক্তি একটি ফোন কল পান যেখানে বলা হয় যে তিনি একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ কোম্পানির পক্ষ থেকে কল পাচ্ছেন। তাকে একটি নতুন প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে বলা হয় এবং তিনি বিশ্বাস করে টাকা বিনিয়োগ করেন। পরে তিনি জানতে পারেন যে এই কোম্পানির সাথে তার বিনিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই।
৩. পিরামিড স্কিম: একজন ব্যক্তি একটি বিনিয়োগ পরিকল্পনার প্রস্তাব পান যেখানে বলা হয় যে তিনি নতুন বিনিয়োগকারী নিয়ে এলে উচ্চ লাভ পাবেন। তিনি প্রাথমিকভাবে কিছু লাভ পান এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আসেন। কিন্তু পরে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় এবং সবাই অর্থ হারায়।
প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
১. বিনিয়োগ করার আগে গবেষণা করুন: বিনিয়োগ করার আগে কোম্পানি বা প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করুন। পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
২. উচ্চ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি থেকে সতর্ক থাকুন: অস্বাভাবিক উচ্চ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি সাধারণত প্রতারণার ইঙ্গিত হতে পারে। বিনিয়োগের আগে বাস্তবসম্মত রিটার্ন আশা করুন।
৩. প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন যাচাই করুন: বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বা প্রজেক্টের নিবন্ধন ও অনুমোদন যাচাই করুন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করুন।
৪. নিরাপদ পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করুন: শুধুমাত্র নিরাপদ পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করুন যেখানে প্রয়োজনে রিফান্ড পেতে পারেন।
৫. ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে সতর্ক থাকুন: বিনিয়োগের আগে ব্যক্তিগত বা আর্থিক তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
৬. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: বিনিয়োগের আগে একজন আর্থিক বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শকের সাথে পরামর্শ করুন।
৭. সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন: তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেবেন না। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বিনিয়োগের সব দিক বিবেচনা করুন।
এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যামের প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব।
আইনি প্রতিকার
অনলাইন প্রতারণা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আইনি প্রতিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতারণার শিকার হলে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং কীভাবে এ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায় তা নিচে আলোচনা করা হলো:
১. স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ
প্রথমে আপনার স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করুন।
- প্রমাণ সংগ্রহ: প্রতারণার প্রমাণ যেমন ইমেল, মেসেজ, লেনদেনের রসিদ ইত্যাদি সংগ্রহ করুন।
- এফআইআর (FIR) দায়ের: পুলিশের কাছে ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট (FIR) দায়ের করুন যাতে প্রতারণার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা থাকে।
২. সাইবার ক্রাইম সেল
অনলাইন প্রতারণার জন্য সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
- জাতীয় সাইবার ক্রাইম পোর্টাল: দেশে জাতীয় সাইবার ক্রাইম পোর্টাল রয়েছে যেখানে অনলাইন অভিযোগ দায়ের করা যায়।
৩. ভোক্তা সুরক্ষা আইনের অধীনে অভিযোগ
অনলাইন প্রতারণার ক্ষেত্রে ভোক্তা সুরক্ষা আইনের অধীনে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
- জাতীয় ভোক্তা সুরক্ষা ফোরাম: ভোক্তারা প্রতারণার শিকার হলে এখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
- জেলা ফোরাম: স্থানীয় স্তরে ভোক্তা ফোরামে অভিযোগ করতে পারেন।
৪. ইন্টারনেট ফ্রড রিপোর্টিং
অনলাইন প্রতারণার বিষয়ে বিভিন্ন ইন্টারনেট ফ্রড রিপোর্টিং সাইটে অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।
- বেটার বিজনেস ব্যুরো (BBB): অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগ এখানে দায়ের করা যায়।
- ইন্টারনেট ক্রাইম কমপ্লেইন্ট সেন্টার (IC3): এফবিআই এবং ন্যাশনাল হোয়াইট কলার ক্রাইম সেন্টার (NW3C) দ্বারা পরিচালিত একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে অনলাইন ফ্রড রিপোর্ট করা যায়।
৫. ব্যাংক এবং পেমেন্ট গেটওয়ে
প্রতারকরা যদি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে অর্থ হাতিয়ে নেয়, তবে তৎক্ষণাৎ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করুন।
- কার্ড ব্লক: ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে আপনার কার্ড বা অ্যাকাউন্ট ব্লক করুন।
- ফ্রড রিপোর্ট: ব্যাংকের ফ্রড বিভাগে রিপোর্ট দায়ের করুন যাতে ট্রানজেকশন বাতিল বা রিফান্ডের ব্যবস্থা করা যায়।
৬. আইনি পরামর্শ
প্রয়োজনে একজন যোগ্য আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন যারা সাইবার ক্রাইম এবং প্রতারণা সংক্রান্ত মামলাগুলি পরিচালনায় দক্ষ।
- সিভিল মামলা: প্রতারণার কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধার করতে সিভিল মামলা দায়ের করতে পারেন।
- ক্রিমিনাল মামলা: প্রতারকের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা দায়ের করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেন।
অনলাইন প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহ করা, স্থানীয় ও জাতীয় সংস্থাগুলির সাথে যোগাযোগ করা এবং প্রয়োজনে আইনি পরামর্শ নেওয়া প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পেতে সহায়ক। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সতর্কতা বজায় রাখার পাশাপাশি, আইনি প্রতিকার গ্রহণের মাধ্যমে প্রতারণা থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।
অনলাইনে প্রতারণা সম্পর্কিত FAQ
ই-কমার্স প্রতারণা
প্রশ্ন: ই-কমার্স প্রতারণা কী?
উত্তর: ই-কমার্স প্রতারণা হলো অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মে পণ্য কেনাবেচার প্রক্রিয়ায় প্রতারকদের দ্বারা ক্রেতাদের ঠকানোর প্রক্রিয়া। এটি বিভিন্ন উপায়ে ঘটতে পারে যেমন নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ, পণ্য না পাঠানো বা ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ক্রেতাদের ঠকানো।
প্রশ্ন: ই-কমার্স প্রতারণা থেকে কীভাবে বাঁচা সম্ভব?
উত্তর: পরিচিত ও বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করুন, গ্রাহক রিভিউ পড়ুন, কাস্টমার সার্ভিস যাচাই করুন, নিরাপদ পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করুন, ওয়েবসাইটের সঠিকতা নিশ্চিত করুন এবং অতিরিক্ত লোভনীয় অফার থেকে সতর্ক থাকুন।
অনলাইনে কেনাবেচার প্রতারণা
প্রশ্ন: কেনাবেচার প্রতারণা কী?
উত্তর: কেনাবেচার প্রতারণা সাধারণত অনলাইন মার্কেটপ্লেস বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ঘটে যেখানে বিক্রেতা বা ক্রেতা উভয়ই প্রতারণা করতে পারে। এটি মিথ্যা পণ্য বিবরণ, পণ্য না পাঠানো, নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ বা ভুয়া ক্রেতার মাধ্যমে হতে পারে।
প্রশ্ন: কেনাবেচার প্রতারণা থেকে কীভাবে বাঁচা সম্ভব?
উত্তর: পরিচিত ও বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন, প্রোফাইল যাচাই করুন, নগদ লেনদেন এড়িয়ে চলুন, পণ্য গ্রহণের আগে অর্থ প্রদান করবেন না এবং কাস্টমার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করুন।
অনলাইনে ভুয়া চাকরির অফার
প্রশ্ন: ভুয়া চাকরির অফার কী?
উত্তর: ভুয়া চাকরির অফার হলো প্রতারণার একটি ধরন যেখানে প্রতারকরা আকর্ষণীয় চাকরির অফার দিয়ে প্রার্থীদের ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করে। এতে আবেদন ফি বা প্রসেসিং চার্জ চাওয়া হয়, ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয় বা মিথ্যা ইন্টারভিউ নেয়া হয়।
প্রশ্ন: ভুয়া চাকরির অফার থেকে কীভাবে বাঁচা সম্ভব?
উত্তর: পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য জব পোর্টাল বা কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে চাকরির জন্য আবেদন করুন, ইমেইল ও ওয়েবসাইট যাচাই করুন, আবেদন ফি বা প্রসেসিং চার্জ এড়িয়ে চলুন, ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে সতর্ক থাকুন এবং অফিসিয়াল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করুন।
ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ হ্যাক
প্রশ্ন: ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ হ্যাকিং কী?
উত্তর: ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ হ্যাকিং হলো প্রতারণার একটি ধরন যেখানে হ্যাকাররা ফিশিং, ম্যালওয়্যার, পাসওয়ার্ড হ্যাকিং বা ভুয়া নোটিফিকেশন পাঠিয়ে ফেসবুক গ্রুপ বা পেজের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
প্রশ্ন: ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ হ্যাকিং থেকে কীভাবে বাঁচা সম্ভব?
উত্তর: শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, দুই-স্তরবিশিষ্ট প্রমাণীকরণ (2FA) চালু করুন, ফিশিং ইমেইল থেকে সতর্ক থাকুন, বিশ্বস্ত ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন, নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং ফেসবুকের সিকিউরিটি চেকআপ টুল ব্যবহার করুন।
অনলাইনে ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম
প্রশ্ন: ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম কী?
উত্তর: ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম হলো প্রতারণার একটি ধরন যেখানে প্রতারকরা উচ্চ রিটার্নের লোভ দেখিয়ে লোকজনকে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করে এবং তাদের অর্থ হাতিয়ে নেয়।
প্রশ্ন: ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম থেকে কীভাবে বাঁচা সম্ভব?
উত্তর: বিনিয়োগ করার আগে গবেষণা করুন, উচ্চ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি থেকে সতর্ক থাকুন, প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন যাচাই করুন, নিরাপদ পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করুন, ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে সতর্ক থাকুন এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
অনলাইনে ব্ল্যাকমেইলিং
প্রশ্ন: ব্ল্যাকমেইলিং কী?
উত্তর: ব্ল্যাকমেইলিং হলো প্রতারণার একটি গুরুতর ধরন যেখানে প্রতারকরা ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি হাতিয়ে নিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলে টাকা বা অন্যান্য সুবিধা আদায় করে।
প্রশ্ন: ব্ল্যাকমেইলিং থেকে কীভাবে বাঁচা সম্ভব?
উত্তর: ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখুন, সতর্ক থাকুন, দৃঢ় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, দুই-স্তরবিশিষ্ট প্রমাণীকরণ (2FA) চালু করুন, অনলাইন সম্পর্কে সতর্ক থাকুন, অপরিচিত লিঙ্ক থেকে দূরে থাকুন, নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।