জামিন কিভাবে নিতে হয় এবং কত টাকা লাগে?

মামলায় জড়ানোর পর করণীয় বিষয় এবং জামিনের প্রক্রিয়া

আপনার বিরুদ্ধে আদালতে কোনো ব্যক্তি মামলা করেছে এবং আদালত থেকে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া অথবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় আপনি চিন্তিত হতে পারেন এবং কী করতে হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালত থেকে জামিন নিতে হবে। তবে অনেকেই জামিনের ব্যাপারে সঠিক ধারণা রাখেন না।

জামিনের ধরনসমূহ

জামিন দুই ধরনের হতে পারে:

  1. আগাম জামিন
  2. অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

 

জামিনযোগ্য অপরাধের জামিন প্রক্রিয়া

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি যদি জামিনযোগ্য অপরাধে গ্রেফতার হন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে যে আদালতে উপস্থাপন করা হবে, সেই আদালত তাকে জামিন দিতে বাধ্য। এই ধারার অধীনে জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির একটি আইনগত অধিকার এবং আদালতের জন্য এটি একটি বাধ্যতামূলক আদেশ।

জামিন অযোগ্য অপরাধের জামিন প্রক্রিয়া

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে জামিন অযোগ্য অপরাধে আটক করলেও তাকে জামিন দেওয়া যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে, জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনগত অধিকার নয় বরং আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। আদালত ইচ্ছা করলে জামিন দিতে পারেন বা না–ও দিতে পারেন। তবে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধে জড়িত থাকার যুক্তিসংগত কারণ থাকে, আদালত তাকে জামিন দিতে পারবেন না। তবুও, যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৬ বছরের নিচে, মহিলা, বা অসুস্থ হন, আদালত তাকে জামিন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।

আগাম জামিন

কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে আদালত থেকে যে জামিন নিয়ে থাকেন, তাকে আগাম জামিন বলা হয়। যখন কোনো ব্যক্তির মনে এমন বিশ্বাস জন্মায় যে তিনি কোনো জামিন অযোগ্য অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তিনি হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করলে ভবিষ্যতে গ্রেপ্তার হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আগাম জামিনের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।

সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ৩১, ৩২ এবং ৩৩ অনুচ্ছেদের বিধানসমূহ ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় প্রতিফলিত হয়েছে। এই ধারার মাধ্যমে আদালত, বিশেষত হাইকোর্ট ও দায়রা আদালত, আগাম জামিন প্রদানে ব্যাপক ক্ষমতা পেয়েছে। যে কোনো নাগরিক গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন। তবে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিন বা আগাম জামিনের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই।

বাংলাদেশের ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির পঞ্চম অধ্যায় এবং দ্বিতীয় তফসিল অনুযায়ী, সাধারণ জামিন এবং আগাম জামিনের কথা বলা হয়েছে। সাধারণ জামিনে একজন নাগরিককে গ্রেফতারের পর নির্দিষ্ট শর্তে আদালতে হাজির করার প্রতিশ্রুতিতে জামিনদারের কাছে সাময়িকভাবে সমর্পণ করা হয়।

আগাম জামিনের প্রেক্ষিতে, যদি কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই সামাজিক বা ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তদন্তের সম্ভাবনা অনুভব করেন, তবে তিনি দায়রা আদালত বা হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। এতে ভবিষ্যতে গ্রেফতার বা হয়রানি থেকে বাঁচার সুযোগ থাকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারে। সাধারণত আমলযোগ্য অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে আসামিকে গ্রেফতার করা হয় না।

৪৯৮ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘আপিল থাকুক বা না থাকুক যেকোনো ক্ষেত্রে’, এই বাক্যাংশ হাইকোর্ট এবং দায়রা আদালতকে বিশাল ক্ষমতা প্রদান করেছে। যদিও দায়রা আদালতে এই ক্ষমতার প্রয়োগের উদাহরণ খুব কম। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ধারায় উল্লেখ আছে যে, একজন আসামি অধিকার অনুযায়ী জামিন চাইতে পারেন এবং আদালতের জন্য এটি বাধ্যতামূলক। তাই হাইকোর্ট বা দায়রা আদালত ৪৯৮ ধারার আওতায় বিচার বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করে।

১৯ ডি এল আর (এসসি) ৩৮-এ বলা হয়েছে, অনুমানের ভিত্তিতে জামিন দেওয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র হাইকোর্ট বা দায়রা জজের আছে, যা অন্য কোনো আদালতের নেই। ৬২ ডি এল আর (এডি) ৪২০-এ বলা হয়েছে, যখন কোনো পলাতক আসামি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে, তখন তার হয়রানিমূলক গ্রেফতার প্রয়োজন হয় না। সুতরাং, গ্রেফতার এড়াতে আগাম জামিন একটি কার্যকর প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।

আদালতের বিবেচনায় আগাম জামিনের বিষয়সমূহ

আদালত যদি মনে করেন যে, কোনো মামলায় আসামিকে অযৌক্তিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে বা তাঁকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে, তবে আদালত আসামিকে গ্রেফতার পূর্বে জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। এটি সাধারণত এমন ক্ষেত্রে ঘটে যখন আদালত বিশ্বাস করেন যে মামলাটি শুধুমাত্র আসামির ক্ষতি করার জন্যই দায়ের করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদ বা তথ্য সংগ্রহের জন্য আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া জরুরি কিনা তা আদালত বিবেচনা করে। যদি আদালত মনে করেন যে এমন হেফাজত প্রয়োজন, তবে তিনি জামিন মঞ্জুর নাও করতে পারেন।

আদালত যদি বুঝতে পারেন যে, আসামি তার জামিনের সুযোগের অপব্যবহার করবেন না বা মামলার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব ফেলবেন না, তবে আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।

আসামি জামিনের অপব্যবহার করে পলাতক হতে পারে কি না তা রাষ্ট্রপক্ষের খেয়াল রাখা জরুরি। এমন সম্ভাবনা থাকলে রাষ্ট্রপক্ষকে জামিন বাতিলের আবেদন করতে হবে, যাতে আসামি জামিন নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে।

আগাম জামিনের আবেদন প্রক্রিয়া

‘আগাম জামিন’ পেতে আবেদনকারীকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি সরকারের বিরাগভাজন হয়ে শীঘ্রই গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন এবং এতে তার সুনাম ও স্বাধীনতায় অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাইকোর্ট বা দায়রা আদালতে আগাম জামিনের দরখাস্ত করতে পারেন। আগাম জামিনের আবেদন শুনানির সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়।

প্রয়োজনীয় ধারা: আগাম জামিনের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হয়। এই ধারাবলে হাইকোর্ট বিভাগ যেকোনো ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুর করার নির্দেশ প্রদান করতে পারেন।

শুনানিতে উপস্থাপিত বিষয়: আগাম জামিন পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি সরকারের বিরাগভাজন হয়ে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন। তাকে দেখাতে হবে যে রাষ্ট্রপক্ষ অসৎ উদ্দেশ্যে তাকে গ্রেপ্তার করতে চায় এবং এতে তার সুনাম ও স্বাধীনতায় অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

কোনো ব্যক্তি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তির আগপর্যন্ত কারাগার থেকে বের হতে হলে তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিতে হবে।

প্রক্রিয়া:

  1. প্রথমে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
  2. সেখানে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করতে হয়।
  3. জামিন নামঞ্জুর হলে দায়রা জজ এবং জেলা জজ আদালতে আবেদন করা হয়।
  4. সেখানেও জামিন নামঞ্জুর হলে হাইকোর্টে আবেদন করতে হয়।
  5. হাইকোর্টে জামিন নামঞ্জুর হলে সর্বশেষ আপিল বিভাগের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

যেকোনো একটি আদালতে জামিন হলে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন, যদি না রাষ্ট্রপক্ষ বা বিরোধী পক্ষ আপিল না করে।

করণীয়

মামলায় জড়ানোর পর জামিন পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তবে এ জন্য আসামিকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বা অসৎ উদ্দেশ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা হবে। তাই জামিন নেওয়া তার একান্ত প্রয়োজন।

জামিনযোগ্য ধারাসমূহঃ

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর দ্বিতীয় তফসিল অনুযায়ী, দন্ডবিধিতে উল্লেখিত সকল জামিনযোগ্য অপরাধের তালিকা নিম্নে দেয়া হলো:

  1. ধারা 143 – বেআইনি জনসমাবেশে অংশগ্রহণ
  2. ধারা 144 – বেআইনি জনসমাবেশের সদস্য হিসেবে অস্ত্রধারণ
  3. ধারা 145 – বেআইনি জনসমাবেশে অস্ত্রশস্ত্র সহ যোগদান
  4. ধারা 147 – দাঙ্গা
  5. ধারা 148 – দাঙ্গা করতে অস্ত্র বা অন্য কিছু ব্যবহার করা
  6. ধারা 151 – বেআইনি জনসমাবেশে যোগদান (যা ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে)
  7. ধারা 160 – গণ-প্রহার (Affray)
  8. ধারা 171 – অবৈধভাবে ভোট প্রদানের জন্য প্ররোচনা করা
  9. ধারা 172 – আইনের অধীনে সমন বা নোটিশে হাজির না হওয়া
  10. ধারা 174 – সমনের বা অন্য নোটিশের অবহেলা করা
  11. ধারা 175 – সরকারি কর্তৃপক্ষের নথি প্রদানে অবহেলা
  12. ধারা 176 – সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য প্রদানে অবহেলা
  13. ধারা 177 – সরকারি কর্মকর্তার কাছে মিথ্যা তথ্য প্রদান করা
  14. ধারা 178 – তথ্য প্রদানে অবহেলা
  15. ধারা 179 – আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক প্রশ্নের উত্তর প্রদানে অবহেলা
  16. ধারা 180 – সরকারি কর্মকর্তার কাছে তথ্য প্রদানে অবহেলা
  17. ধারা 181 – মিথ্যা তথ্য প্রদান করা
  18. ধারা 182 – সরকারি কর্মকর্তার কাছে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে ক্ষতি করা
  19. ধারা 186 – সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইনানুগ বাধা দান
  20. ধারা 187 – জনসাধারণের কর্তব্য পালনে অবহেলা
  21. ধারা 188 – সরকারি কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করা
  22. ধারা 189 – সরকারি কর্মকর্তাকে আঘাত বা হুমকি প্রদান করা
  23. ধারা 190 – অবৈধ আইনানুগ কার্যকলাপ
  24. ধারা 193 – মিথ্যা সাক্ষ্যদান
  25. ধারা 196 – মিথ্যা সাক্ষ্যদানের জন্য সৃষ্ট দোষ
  26. ধারা 197 – আদালতের কার্যধারা লঙ্ঘন করা
  27. ধারা 198 – ভুল নথি প্রদান করা
  28. ধারা 199 – আদালতের কাছে মিথ্যা শপথ গ্রহণ
  29. ধারা 200 – মিথ্যা শপথে সাক্ষ্য প্রদান
  30. ধারা 201 – অপরাধের প্রমাণ লোপ
  31. ধারা 202 – অপরাধের তথ্য গোপন
  32. ধারা 203 – অপরাধের তথ্য গোপন
  33. ধারা 204 – সরকারি নথি ধ্বংস
  34. ধারা 205 – ভুয়া পরিচয় প্রদান
  35. ধারা 209 – মিথ্যা মামলা দায়ের করা
  36. ধারা 211 – মিথ্যা অপরাধ অভিযোগ করা
  37. ধারা 215 – অপরাধীদের থেকে ঘুষ গ্রহণ
  38. ধারা 216 – অপরাধীদের সাহায্য করা
  39. ধারা 218 – সরকারি কর্তব্যে অবহেলা
  40. ধারা 219 – আদালতের রায়কে প্রভাবিত করা
  41. ধারা 220 – আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার
  42. ধারা 221 – পুলিশের কর্তব্যে অবহেলা
  43. ধারা 222 – বন্দী পালানোর সুযোগ দেওয়া
  44. ধারা 223 – কারাগার থেকে পলায়ন
  45. ধারা 224 – পুলিশের কর্তব্যে অবহেলা
  46. ধারা 225 – বিচারাধীন বন্দীর পলায়ন
  47. ধারা 225A – পুলিশের হেফাজত থেকে পলায়ন
  48. ধারা 225B – পুলিশের হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা
  49. ধারা 227 – সোপর্দ করা বন্দী পালানোর সুযোগ দেওয়া
  50. ধারা 228 – বিচারকার্য চলাকালীন আদালতকে অপমান করা
  51. ধারা 269 – অবহেলা করে সংক্রামক রোগ ছড়ানো
  52. ধারা 270 – সংক্রামক রোগ ছড়ানো
  53. ধারা 277 – জলাধার দূষণ করা
  54. ধারা 278 – বায়ু দূষণ করা
  55. ধারা 284 – বিষাক্ত পদার্থের ব্যবহারে অবহেলা
  56. ধারা 285 – আগুন বা দাহ্য পদার্থের ক্ষেত্রে অবহেলা
  57. ধারা 286 – বিস্ফোরক পদার্থের ক্ষেত্রে অবহেলা
  58. ধারা 287 – যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে অবহেলা
  59. ধারা 288 – ভবন নির্মাণে অবহেলা
  60. ধারা 289 – প্রাণী সংক্রান্ত অবহেলা
  61. ধারা 290 – সর্বসাধারণের অসুবিধা সৃষ্টি করা
  62. ধারা 291 – সর্বসাধারণের অসুবিধা পুনরাবৃত্তি করা
  63. ধারা 292 – অশ্লীল প্রকাশনা বিক্রি বা বিতরণ
  64. ধারা 294 – অশ্লীল কাজ বা গান করা
  65. ধারা 295A – ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা
  66. ধারা 298 – ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা
  67. ধারা 323 – স্বল্পমাত্রায় আঘাত করা
  68. ধারা 334 – স্বল্পমাত্রায় আঘাতের কারণে ক্ষতি
  69. ধারা 335 – স্বল্পমাত্রায় আঘাতের কারণে গুরতর ক্ষতি
  70. ধারা 336 – জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা
  71. ধারা 337 – স্বল্পমাত্রায় আঘাত করা
  72. ধারা 338 – স্বল্পমাত্রায় আঘাতের কারণে গুরুতর ক্ষতি
  73. ধারা 341 – অবৈধভাবে আটকানো
  74. ধারা 342 – অবৈধভাবে আটকানো
  75. ধারা 343 – এক সপ্তাহের বেশি আটকানো
  76. ধারা 344 – দশ দিনের বেশি আটকানো
  77. ধারা 346 – এক মাসের বেশি আটকানো
  78. ধারা 352 – আক্রমণ করা
  79. ধারা 355 – অপমানজনক আক্রমণ
  80. ধারা 358 – অবৈধ আক্রমণ
  81. ধারা 379 – চুরি
  82. ধারা 403 – খেয়ানতিপূর্ণভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে জিনিসপত্র রাখা
  83. ধারা 406 – খেয়ানতিপূর্ণ বিশ্বাসভঙ্গ
  84. ধারা 417 – প্রতারণা
  85. ধারা 418 – শিক্ষানবিস বা চাকুরিজীবীকে প্রতারণা
  86. ধারা 419 – ভুয়া পরিচয় প্রদান করে প্রতারণা
  87. ধারা 426 – স্বল্পমাত্রায় সম্পত্তির ক্ষতি
  88. ধারা 428 – ১০ টাকার বেশি মূল্যের প্রাণী হত্যা বা ক্ষতি
  89. ধারা 429 – ৫০ টাকার বেশি মূল্যের প্রাণী হত্যা বা ক্ষতি
  90. ধারা 447 – ভূমি দখল করা
  91. ধারা 448 – গৃহদখল
  92. ধারা 465 – জালিয়াতি
  93. ধারা 471 – জাল নথি ব্যবহার করা
  94. ধারা 477 – হিসাব নথি বিকৃত করা
  95. ধারা 486 – জাল পণ্য বিক্রি
  96. ধারা 500 – মানহানি
  97. ধারা 501 – মানহানিকর লেখা বা ছাপানো
  98. ধারা 502 – মানহানিকর লেখা বিক্রি করা

এই তালিকাটি সম্পূর্ণ নয়, বরং ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তফসিল অনুযায়ী কয়েকটি সাধারণ জামিনযোগ্য অপরাধের উদাহরণ মাত্র। বিস্তারিত জানার জন্য সম্পূর্ণ তফসিলটি দেখা প্রয়োজন।

জামিন অযোগ্য ধারাসমূহঃ

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure, 1898) এর দ্বিতীয় তফসিল অনুযায়ী, দন্ডবিধিতে উল্লেখিত সকল জামিন অযোগ্য অপরাধের তালিকা নিম্নে দেয়া হলো:

  1. ধারা 121 – সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা
  2. ধারা 121A – যুদ্ধের ষড়যন্ত্র
  3. ধারা 122 – যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্র সংগ্রহ
  4. ধারা 123 – শত্রুকে সহায়তা করা
  5. ধারা 124A – রাষ্ট্রদ্রোহ (Sedition)
  6. ধারা 131 – বিদ্রোহে উস্কানি দেয়া
  7. ধারা 132 – বিদ্রোহের জন্য দণ্ড
  8. ধারা 194 – মিথ্যা প্রমাণ সৃষ্টির জন্য শাস্তি
  9. ধারা 232 – মুদ্রা বা ব্যাংক নোট জাল করা
  10. ধারা 238 – মুদ্রা জাল করার প্রচেষ্টা
  11. ধারা 302 – খুন
  12. ধারা 303 – মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি কর্তৃক খুন
  13. ধারা 304 – অনিচ্ছাকৃত খুন
  14. ধারা 304A – অবহেলার কারণে মৃত্যু
  15. ধারা 305 – আত্মহত্যায় প্ররোচনা
  16. ধারা 306 – আত্মহত্যার প্ররোচনা
  17. ধারা 307 – খুনের চেষ্টা
  18. ধারা 308 – অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টা
  19. ধারা 311 – ঘৃণ্য অপরাধের চেষ্টা
  20. ধারা 326 – মারাত্মক অস্ত্র বা উপকরণ দ্বারা আঘাত করা
  21. ধারা 328 – বিষ বা ক্ষতিকারক পদার্থ দ্বারা আঘাত করা
  22. ধারা 329 – মারাত্মক আঘাতের উদ্দেশ্যে আঘাত করা
  23. ধারা 364 – খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ
  24. ধারা 364A – মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ
  25. ধারা 365 – গুম করা
  26. ধারা 367 – ক্রীতদাস বা যৌনকর্মের উদ্দেশ্যে অপহরণ
  27. ধারা 376 – ধর্ষণ
  28. ধারা 377 – প্রাকৃতিক অপরাধ
  29. ধারা 395 – ডাকাতি
  30. ধারা 396 – ডাকাতির সময় খুন
  31. ধারা 397 – ডাকাতির সময় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার
  32. ধারা 399 – ডাকাতির প্রস্তুতি
  33. ধারা 402 – ডাকাতির জন্য মিটিং
  34. ধারা 412 – ডাকাতির মাল গ্রহণ
  35. ধারা 413 – প্রাপ্ত ডাকাতির মাল বিক্রি করা
  36. ধারা 414 – চুরি করা সম্পত্তি গোপন করা
  37. ধারা 449 – খুন, ধর্ষণ বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে গৃহদখল
  38. ধারা 450 – গুরুতর অপরাধের উদ্দেশ্যে গৃহদখল
  39. ধারা 457 – রাতের বেলা গৃহদখল বা গৃহভঙ্গ
  40. ধারা 458 – রাতের বেলা গুরুতর আঘাতের উদ্দেশ্যে গৃহদখল
  41. ধারা 459 – গুরুতর আঘাতের সময় গৃহভঙ্গ
  42. ধারা 460 – গৃহভঙ্গের সময় খুন
  43. ধারা 489A – জাল মুদ্রা বা ব্যাংক নোট তৈরি
  44. ধারা 489B – জাল মুদ্রা বা ব্যাংক নোট ব্যবহার করা
  45. ধারা 489C – জাল মুদ্রা বা ব্যাংক নোট রাখা

এই তালিকাটি প্রধান জামিন অযোগ্য অপরাধের উদাহরণ প্রদান করে। সম্পূর্ণ তালিকা এবং বিস্তারিত জানার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তফসিলটি দেখা প্রয়োজন।

 

জামিন পেতে কত টাকা লাগে? – বিস্তারিত গাইড

জামিন পেতে কত টাকা লাগে? এই প্রশ্নটি অনেকের মনে আসে যখন তারা নিজে বা তাদের পরিচিত কেউ আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। জামিনের বিষয়টি বেশ জটিল হতে পারে, এবং এটি নির্ভর করে মামলার প্রকৃতি, আদালতের সিদ্ধান্ত এবং অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ার উপর। এখানে আমরা জামিন প্রাপ্তির খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

১. জামিন কী?

জামিন হল একটি আইনি প্রক্রিয়া যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতের নির্দেশে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয় বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন। এটি অভিযুক্ত ব্যক্তির আদালতে উপস্থিত থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

২. জামিনের ধরণ

জামিন বিভিন্ন ধরণের হতে পারে:

  • অস্থায়ী জামিন (Interim Bail): আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পূর্বে সাময়িকভাবে মুক্তি।
  • স্থায়ী জামিন (Permanent Bail): মামলার পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন মুক্তি।

৩. জামিনের খরচ নির্ধারণের উপাদানসমূহ

জামিনের খরচ নির্ধারণে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়:

  • মামলার ধরণ: গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে জামিনের পরিমাণ বেশি হতে পারে।
  • আদালতের ধরণ: উচ্চ আদালতে খরচ বেশি হতে পারে।
  • আইনজীবীর ফি: বিভিন্ন আইনজীবীর ফি ভিন্ন হতে পারে।
  • অন্যান্য ফি: কোর্ট ফি, নথিপত্রের ফি ইত্যাদি।

৪. জামিনের খরচের ধরন

জামিনের খরচ মূলত দুই ধরণের হতে পারে:

  • নগদ জামিন (Cash Bail): আদালত নির্ধারিত টাকা নগদ জমা দিতে হয়।
  • জামিননামা (Bail Bond): জামিননামা জমা দেওয়ার মাধ্যমে জামিন পাওয়া যায়।

৫. জামিন পেতে প্রয়োজনীয় তথ্য

জামিন পেতে নিম্নলিখিত তথ্য ও নথিপত্র প্রয়োজন:

  • মামলার নম্বর ও অভিযোগের বিবরণ।
  • আবেদনকারীর পূর্ণ নাম ও ঠিকানা।
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • আবেদনকারীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট।

৬. জামিনের খরচ সম্পর্কে ধারণা

জামিনের খরচ সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা যাক:

  • সাধারণত ছোটখাট অপরাধের জন্য: ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা।
  • গুরুতর অপরাধের জন্য: ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা বা তার বেশি।
  • আইনজীবীর ফি: ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি।

৭. জামিন প্রক্রিয়া

জামিন প্রক্রিয়ার ধাপগুলি হলো:

  1. আবেদন জমা: জামিনের জন্য আবেদন আদালতে জমা দিতে হয়।
  2. আদালতের শুনানি: বিচারক অভিযোগ এবং আবেদনকারীর প্রমাণাদি পর্যালোচনা করেন।
  3. জামিন মঞ্জুর: বিচারক জামিন মঞ্জুর করলে নির্ধারিত টাকা জমা দিতে হয়।
  4. জামিননামা জমা: নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী জামিননামা জমা দিতে হয়।

৮. জামিন পেতে কিছু টিপস

  • সঠিক নথিপত্র প্রস্তুত রাখুন: সব নথিপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত থাকলে প্রক্রিয়া সহজ হয়।
  • ভালো আইনজীবী নিয়োগ করুন: একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী জামিন প্রাপ্তিতে সহায়তা করতে পারেন।
  • আদালতের শর্ত পালন করুন: আদালতের শর্ত পূরণ করলে পুনরায় আইনি জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা কমে।

উপসংহার

জামিন পেতে কত টাকা লাগে তা নির্ভর করে বিভিন্ন উপাদানের উপর। সঠিক তথ্য ও প্রস্তুতি থাকলে জামিন প্রক্রিয়া সহজ হতে পারে। আইনি পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে এগিয়ে গেলে সমস্যা সমাধান সম্ভব।

আশা করি এই গাইডটি আপনার জন্য সহায়ক হবে। যদি আরও প্রশ্ন থাকে, তবে আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উত্তম।

Share  This Article Now

Contact info:
Advocate Rashed CEO Spark Advocates
Adv. Rashedujjaman Rashed
Plot 299, Ward 2, Koya Golahat, 1st Floor Opposite Golahat Puraton Mosque, Saidpur