১০৭ এর মামলা: হুমকি দিলে করণীয়, শাস্তি, প্রতিকার

বাংলাদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন যা জনসাধারণের শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কেউ কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির বিরুদ্ধে হুমকি প্রদান করে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা ১০৭ এর মামলা, হুমকি দিলে করণীয়, শাস্তি, এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১০৭ ধারার মামলা ১০৭ ধারার মামলা

Table of Contents

১০৭ এর মামলা কি?

ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোন কার্যকলাপ করে যা জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে বা কোন ব্যক্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়, তবে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১০৭ ধারা অনুযায়ী মামলা করা যায়। এই মামলা সাধারণত স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হয় এবং এর মাধ্যমে হুমকি প্রদানকারী ব্যক্তিকে শান্তি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করা হয়।

কেউ হুমকি দিলে করণীয়

১. প্রমাণ সংগ্রহ করুন: হুমকির শিকার হলে প্রথমেই উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করুন। এটি হতে পারে হুমকির ফোন কল রেকর্ডিং, মেসেজ, ইমেইল, বা প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য।

২. পুলিশের সহায়তা নিন: নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করুন। পুলিশ অভিযোগটি নথিভুক্ত করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৩।ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করুন: হুমকি প্রচুর হলে, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১০৭ ধারায় একটি আবেদন দাখিল করতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।

[rpt name=”consultation-fee”]

হুমকি দিলে শাস্তি

১০৭ ধারার অধীনে, হুমকি প্রদানকারীকে শান্তি রক্ষার জন্য একটি বন্ডে স্বাক্ষর করতে হতে পারে। এই বন্ড সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছরের জন্য কার্যকর হয়। বন্ডে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি হুমকি প্রদানকারী আবারও কোন অপরাধমূলক কার্যকলাপ করে, তবে তার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যেমন গ্রেপ্তার বা জরিমানা।

প্রতিকার

১. মানসিক সমর্থন: হুমকির শিকার ব্যক্তি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারেন। পরিবার এবং বন্ধুদের সমর্থন জরুরি।

২. আইনি সহায়তা: একটি দক্ষ আইনজীবীর সহায়তা নিন যাতে মামলা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়।

৩। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: হুমকির পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

৪. সচেতনতা বৃদ্ধি: হুমকি ও এর পরিণতি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে হুমকির শিকার ব্যক্তিরা সাহসী হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা হুমকি প্রদান ও জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করা রোধে একটি কার্যকরী আইন। হুমকি প্রাপ্তির পর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রমাণ সংগ্রহ, এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হুমকি প্রদানকারীকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এই ধারা অনুযায়ী শাস্তি ও প্রতিকার ব্যবস্থার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

 

১০৭ এর ধারা অনুযায়ী মামলা করার প্রক্রিয়া এবং অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:

কিভাবে মামলা করবেন

১. হুমকি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করুন:

  • হুমকির সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করুন। এটি হতে পারে হুমকির ফোন কলের রেকর্ডিং, টেক্সট মেসেজ, ইমেইল, কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য।

২. পুলিশ স্টেশনে যান:

  • নিকটস্থ থানায় যান এবং আপনার অভিযোগ নথিভুক্ত করুন। পুলিশ অফিসার আপনার অভিযোগ শুনে একটি এফআইআর (FIR) বা জিডি (General Diary) এন্ট্রি করবেন। আপনার সাথে থাকা প্রমাণাদি তাদের প্রদান করুন।
  1. ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করুন:
    • পুলিশি অভিযোগ দায়ের করার পর, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে ১০৭ ধারার আওতায় একটি মামলা দায়ের করতে পারেন। এখানে আপনার অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

কোথায় মামলা করবেন

১. স্থানীয় থানায়:

  • আপনার এলাকায় যে থানা অবস্থিত, সেখানে গিয়ে প্রথমে অভিযোগ দায়ের করুন। এটি আপনার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত।

২. ম্যাজিস্ট্রেট আদালত:

  • স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর, নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যান। এখানে ১০৭ ধারার আওতায় একটি মামলা দায়ের করা যায়। ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করার ধাপ:

১. আবেদন প্রস্তুত করুন:

  • একটি লিখিত আবেদন তৈরি করুন যেখানে হুমকির বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। এখানে আপনার নাম, ঠিকানা, হুমকির তারিখ ও সময়, এবং হুমকিদাতার বিবরণ থাকবে।

২. আদালতে আবেদন দাখিল করুন:

  • ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে আবেদন দাখিল করুন। এখানে একটি আবেদন ফি লাগতে পারে।

৩. আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করুন:

  • ম্যাজিস্ট্রেট আপনার আবেদন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। প্রয়োজনে আদালত হুমকিদাতাকে তলব করতে পারেন এবং তাকে শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১. জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি

২. হুমকির প্রমাণ (ফোন কল রেকর্ডিং, মেসেজ, ইমেইল, ইত্যাদি)

৩. পুলিশি অভিযোগের কপি

৪. আবেদনপত্র

 

১০৭ এর মামলা সম্পর্কিত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

প্রশ্ন ১: ১০৭ এর মামলা কী?

উত্তর: ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা জনসাধারণের শান্তি রক্ষার জন্য প্রযোজ্য। যদি কেউ কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির বিরুদ্ধে হুমকি প্রদান করে, তবে তার বিরুদ্ধে এই ধারা অনুযায়ী মামলা করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ২: ১০৭ এর মামলা করার প্রক্রিয়া কী?

উত্তর: ১০৭ এর মামলা করার প্রক্রিয়া সাধারণত নিম্নরূপ:

  1. হুমকি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ: প্রমাণাদি সংগ্রহ করুন।
  2. থানায় অভিযোগ দায়ের: নিকটস্থ থানায় গিয়ে এফআইআর বা জিডি এন্ট্রি করুন।
  3. ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন: থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে ১০৭ ধারায় মামলা দায়ের করুন।

প্রশ্ন ৩: কোথায় মামলা করব?

উত্তর: প্রথমে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। তারপর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে ১০৭ ধারার আওতায় মামলা দায়ের করুন।

প্রশ্ন ৪: মামলা করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে?

উত্তর:

  1. জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  2. হুমকির প্রমাণ (ফোন কল রেকর্ডিং, মেসেজ, ইমেইল, ইত্যাদি)
  3. পুলিশি অভিযোগের কপি
  4. আবেদনপত্র

প্রশ্ন ৫: ১০৭ ধারায় মামলা হলে কী শাস্তি হতে পারে?

উত্তর: ১০৭ ধারার অধীনে হুমকি প্রদানকারীকে শান্তি রক্ষার জন্য একটি বন্ডে স্বাক্ষর করতে হতে পারে। বন্ডের মেয়াদ সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর হয়। মেয়াদের মধ্যে কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপ করলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন ৬: হুমকি প্রাপ্তির পর কী করণীয়?

উত্তর:

  1. প্রমাণ সংগ্রহ করুন।
  2. থানায় অভিযোগ দায়ের করুন।
  3. ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করুন।

প্রশ্ন ৭: হুমকি প্রাপ্তির পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে কী করণীয়?

উত্তর: মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা নিন। প্রয়োজন হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

প্রশ্ন ৮: যদি পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কী করব?

উত্তর: যদি পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তবে উচ্চতর পুলিশ কর্তৃপক্ষ বা মানবাধিকার সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

প্রশ্ন ৯: ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে কত খরচ হবে?

উত্তর: ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে সাধারণত একটি আবেদন ফি প্রয়োজন হতে পারে। ফি-এর পরিমাণ আদালত অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

প্রশ্ন ১০: ১০৭ ধারার মামলা কি শুধুমাত্র হুমকির জন্য প্রযোজ্য?

উত্তর: হ্যাঁ, ১০৭ ধারা মূলত জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করা বা কোনো ব্যক্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার হুমকির জন্য প্রযোজ্য।

 

উপসংহার

১০৭ এর ধারা অনুযায়ী মামলা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা হুমকির শিকার ব্যক্তিকে নিরাপত্তা প্রদান করতে সহায়ক। সঠিকভাবে মামলা দায়ের করতে হলে প্রথমে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে হবে এবং পরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে মামলা করতে হবে। এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করলে হুমকি প্রদানকারীকে আইনানুগ শাস্তি প্রদান করা সম্ভব।

Share  This Article Now

Contact info:
Advocate Rashed CEO Spark Advocates
Adv. Rashedujjaman Rashed
Plot 299, Ward 2, Koya Golahat, 1st Floor Opposite Golahat Puraton Mosque, Saidpur